1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিতে পারবে ব্যাংক, ‘জোড়াতালি সমাধান’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৮৫ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন বাফেদা এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ এবিবি সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রবাসী আয়ের ওপর বাড়তি আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেবে ব্যাংক। যদিও বাফেদা বলছে, এই প্রণোদনা দেয়ার জন্য ব্যাংক বাধ্য নয়, ব্যাংক যদি প্রবাসী আয় কিনতে চায় তাহলে এই প্রণোদনা দিতে পারে।

বাংলাদেশে আগে থেকেই রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রতিটি পরিবার প্রবাস থেকে পাঠানো অর্থের ওপর সরকারের কাছ থেকে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেয়ে আসছে। এখন তার সাথে এই বাড়তি প্রণোদনা যুক্ত হবে। ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে লেনদেনে উৎসাহিত করা এবং চলমান ডলার সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ রেমিটেন্স বা প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো আয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক কয়েক মাস ধরেই প্রবাসী আয় কমছে। কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, বৈধ পথে টাকা পাঠানোর হার কমে যাওয়া এর একটি কারণ হতে পারে। এখন নতুন এই প্রণোদনা প্রবাসী আয় বাড়াতে কতটা সাহায্য করতে পারবে? চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট কাটাতে কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে এ সিদ্ধান্ত?

শ্রমিকেরা কী বলছেন?
সৌদি আরবে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করা রহিম মিয়া (পরিবর্তিত নাম) প্রায় প্রতি মাসেই বাংলাদেশে টাকা পাঠান। কিন্তু দুই বছর আগে সৌদি আরব যাওয়ার পর প্রথম কয়েক মাসের পর থেকে কখনোই বৈধ পদ্ধতিতে বাংলাদেশে টাকা পাঠাননি তিনি। তিনি যখন জানতে পারেন যে এখন বৈধভাবে টাকা পাঠালে প্রতি ডলারে আগের চেয়ে বেশি টাকা পেতে পারেন, তখনও বৈধভাবে টাকা পাঠানোতে খুব একটা উৎসাহী মনে হলো না তাকে।

 

বিবিসিকে রহিম মিয়া বলছিলেন, ‘যত টাকা বেশি পাওয়া যাবে তার চেয়ে বেশি রেটে এখনই দেশে পাঠাতে পারি আমরা। আর কম রেট ছাড়াও বৈধভাবে টাকা পাঠানোর জন্য এখানে (সৌদি আরবে) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগে, দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগে – অনেক ঝামেলা।’ রহিম মিয়ার মত বাংলাদেশের প্রবাসী জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক ও অবৈধ পদ্ধতিতে দেশে টাকা পাঠিয়ে থাকেন। এই পদ্ধতি বাংলাদেশে ‘হুন্ডি’ নামে পরিচিত।

 

সৌদি আরবের আরেকজন প্রবাসী বাংলাদেশী মোহাম্মদ হাশেম (পরিবর্তিত নাম) অবশ্য বলছিলেন যে তিনি তার প্রবাস জীবনের একটা বড় সময়ই বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু গত এক বছর যাবত বৈধভাবে তুলনামূলক কম টাকা পাওয়ায় ‘হুন্ডি’র মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন।

’১২ বছরের সৌদি জীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছি, যদিও হুন্ডিতে টাকা পাঠালে কিছু টাকা বেশি পেত আমার পরিবার। কিন্তু বছরখানেক ধরে হুন্ডি আর ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো টাকার পার্থক্য অনেক বেশি হয়ে গেছে,’ বলেন তিনি। এই প্রবাসী শ্রমিক আরো বলেন, ‘এত বড় লস আসলে মেনে নিতে পারছিলাম না, তাই গত কিছুদিন ধরে হুন্ডিতেই টাকা পাঠাচ্ছি।’বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অনেকের গল্পটাই মোহাম্মদ হাশেম আর রহিম মিয়ার মত। লেনদেনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি টাকা পাওয়া যাবে বলে তাদের অধিকাংশই বৈধ পদ্ধতি বাদ দিয়ে অবৈধভাবে দেশে টাকা পাঠান।

ব্যাংক কিভাবে প্রণোদনা দেবে?
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাফেদার নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল হাশেম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ব্যাংকগুলো এখন থেকে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দেবে।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক প্রবাসী আয়ে এই আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা নিজস্ব খাত থেকে দেবে এবং এই প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’

প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেন বৈধ পথে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে প্রবাসী আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।

 

 

প্রবাসীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রথম ২০১৯ সালের জুলাইতে সরকার প্রবাসী আয়ে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সেটি বাড়িয়ে প্রণোদনা হার আড়াই শতাংশ করা হয়।

কিন্তু গত বছর খানেক ধরে ডলার সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে নানাভাবে সরকার সেটি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে।

সবশেষ এখন সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও প্রবাসী আয়ের ওপর সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিতে পারবে, সম্প্রতি এমন যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে ব্যাংকগুলোতে।

আব্দুল হাশেম বলেছেন, ‘প্রবাসী আয়ে ব্যাংক সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিতে পারবে। এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যথাযথ বিধি অনুসরণ করে এই লেনদেন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।’

বর্তমানে প্রতি ডলারে সরকার নির্ধারিত রেট ১১০ টাকা ৫০ পয়সার সাথে, সরকারি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা যোগ করে এতদিন প্রতি ডলারের বিনিময়ে প্রবাসীরা পেতেন প্রায় ১১৩ টাকা ২৬ পয়সা।

নতুন ব্যবস্থায় এখন তার সাথে আরো আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা যদি ব্যাংক দেয়, তাহলে প্রতি ডলারে প্রায় ১১৬ টাকার কাছাকাছি পাবেন প্রবাসীরা।

তবে বাফেদা বলছে, প্রবাসী আয় আগের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি দাম দিয়ে কিনলেও পুরনো দামেই ডলার বিক্রি করতে হবে ব্যাংককে।

এর মানে হচ্ছে, প্রায় ১১৬ টাকা দিয়ে ডলার কিনলেও তা ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করতে হবে তাদের।

‘জোড়াতালি সমাধান’ বলছেন অর্থনীতিবিদরা
অর্থনীতিবিদদের মতে, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স দেশে আনার জন্য এই ধরণের পদক্ষেপ এক ধরণের ‘জোড়াতালি সমাধান’ এবং এই ধরণের উদ্যোগ নিয়ে রেমিট্যান্সের হার কিছুটা বাড়ানো সম্ভব হলেও সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হবে না।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, বৈধ চ্যানেলে আসা ডলার ও হুন্ডির মাধ্যমে আসা ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরণের পার্থক্য থাকার ফলে এই উদ্যোগ প্রবাসীদের মধ্যে খুব একটা উৎসাহ তৈরি করবে না।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক যদি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়, তার পরেও ডলারের দাম হবে প্রায় ১১৬ টাকা। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে এখনই ডলারের দাম ১১৯ থেকে ১২০ টাকার মত। তাহলে কেন মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাবে?’

ব্যাংকগুলো তাদের সিএসআর ফান্ড বা সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে প্রবাসী আয় কেনার জন্য প্রণোদনা দেয়ার কথা বলেছে।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, ব্যাংকগুলো তাদের সিএসআর ফান্ডের পুরো অর্থ ব্যয় করলেও রেমিট্যান্স প্রবাহে খুব বেশি হেরফের হবে না।

তিনি বলেছেন, ‘এ বছরের ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের সব ব্যাংক মিলিয়ে সিএসআর ফান্ড ছিল পাঁচ শ’ কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ বছরে যদি এক হাজার কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডের পুরোটাই ব্যাংকগুলো প্রণোদনা দিয়ে ডলার কেনে, তাহলেও বছরে সর্বোচ্চ আট শ’ থেকে নয় শ’ কোটি ডলার আসবে।’

এছাড়া সব ব্যাংক তাদের সিএসআর ফান্ড খরচ করে প্রবাসী আয় কেনার জন্য আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেবে কি না, সেই প্রশ্নও থেকে যায়।

কারণ ব্যাংক তাদের প্রচারণার লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিযোগিতা আয়োজন, বৃত্তি প্রদান বা সেবামূলক কাজে তাদের সিএসআর ফান্ড ব্যবহার করে থাকে।

কাজেই প্রবাসী আয় কেনার জন্য প্রণোদনা না দিয়ে অনেক ব্যাংকই সেসব কাজকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য যথাযথ মনে করতে পারে বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন।

ডলারের দাম নির্ধারণ না করে দিয়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়াই এই সমস্যার সমাধান বলে মনে করেন তিনি।

ডলারের অভিন্ন বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করার জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের বিনিময় হার বেধে দিতে শুরু করেছে বাফেদা এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ।

সূত্র : বিবিসি

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..